~ ২৪ মার্চ ১৯৭১, পাক সেনা হত্যার মধ্য দিয়ে রংপুবাসীর মুক্তিযুদ্ধ শুরু ~
সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৬ মার্চ, আর পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন আব্বাসীসহ তিন জন জওয়ানকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার দুই দিন আগে ২৪ মার্চই স্বাধীনতার যুদ্ধ আরম্ভ করে রংপুর জেলার সাবেক সাতগাড়া ইউনিয়নের (এখন সিটি কর্পোরেশনে) দামোদরপুরের সাধারণ, অনাহারী, জীর্ণশীর্ণ মানুষ। রচিত হয় ইতিহাস। এ এক গর্বের ইতিহাস। তাই ২৪ মার্চ শুধু রংপুর নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।
রংপুরের বীর জনতা সেনানিবাসে খাদ্য সরবরাহ সীমিত করে দেয়ায় সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ২৪ মার্চ সেনাবাহিনীর একটি জীপ সেনানিবাসের পশ্চিম দিকে দিয়ে বের হয়ে নিসবেতগঞ্জ হাটে উপস্থিত হয় খাদ্য (মুরগী ও ডিম) সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। তাদের দেখে গ্রামবাসী প্রথমে হতচকিত হয়ে যায়। জানা যায় জীপের ড্রাইভার বাঙ্গালী। মুক্তির নেশায় মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ, কয়েকজন সিদ্ধান্ত নেন আক্রমণের, চলতে থাকে প্রস্তুতি।
সেনা সদস্যদের দেখে যুবক শাহেদ আলী (পেশায় কসাই) সাইকেল চেপে আগেই নিজ গ্রামে চলে যান। দ্রুতই এই খবরটি ছড়িয়ে পরে সম্মানীপুর, দামোদরপুর, বড়বাড়ি, মনোহরপুর গ্রামের মানুষদের কাছে। গ্রামবাসী দা, বল্লম, কুড়াল, বটি, খুন্তিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাঁশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে জীপের জন্য। অবশেষে জীপটি যখন দামোদরপুর বড় ময়দান এলাকায় আসে তখন যুবক শাহেদ আলী এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাদের গ্রামের আসার কারণ। গাড়িতে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেন আব্বাসীসহ এলএমজি হাতে তিন জওয়ান। এর মধ্যেই বাদশা, সালাম, রফিকুলসহ তিন চার জন গাড়ির কাছে চলে এসেছেন। পাক সেনারা কিছু বুঝে উঠার আগেই শাহেদ আলী জিপের বনেটে উঠে যান এবং এক টানে ছিনিয়ে নেন এলএমজি। ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছিল যে ক্যাপ্টেন আব্বাসী হতভম্ব হয়ে যায়। এই সুযোগে শাহেদ আলী খাপ্পর (বল্লম টাইপের) দিয়ে আব্বাসীকে আঘাত করলে সে লুটিয়ে পরে। অপরদিকে বাদশা, সালাম, রফিকুল তাদের হাতে থাকা দা, কুড়াল, বল্লম দিয়ে আঘাত হানে তিন সেনা সদস্যের উপরে। হত্যা করা হয় তিন জওয়ানসহ ক্যাপ্টেন আব্বাসীকে।
গাড়ি চালক বাঙ্গালী বিধায় সহযোগিতা করেছিল, তাই দায় মুক্তির জন্য তাঁকেও দা দিয়ে আঘাত করা হলো যেন সন্দেহ না করতে পারে। আহত বাঙ্গালী ড্রাইভার নিসবেতগঞ্জ পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে আনেন। ইতোমধ্যেই খবর পৌঁছে যায় ক্যান্টনমেন্টে। এদিকে সেনা সদস্য হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ পাক হানাদারেরা সেদিনই বিকালে নগরীর গনেশপুরকে ঘটনাস্থল ভেবে পুরো এলাকা জ্বালিয়ে দেয় । সেদিন পাক সেনাদের গুলিতে পৌর বাজার (বর্তমান সিটি বাজার) এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন। শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের সমাধি রয়েছেন নগরীর হনুমান তলা কাজী নজরুল ইসলাম সরণীতে।
(প্রতীকী ছবি)
লিখেছেন : Riyadh Anwar Shubho ভাই।
Post a Comment